বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আজকাল যখনই বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়, আমার মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে। আপনারা কি আমার মতো অনুভব করেন? বিশেষ করে যখন হংকং আর তাইওয়ানের কথা ভাবি, তখন যেন মনের মধ্যে এক অন্যরকম টানাপোড়েন তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আর নিজস্ব পরিচয়ের জন্য লড়ছে যে দুটি অঞ্চল, তাদের দিকে আমাদের সবার চোখ। আমার মনে আছে, কয়েক বছর আগেও হংকং-এর আকাশে এক ভিন্ন স্বাধীনতার সুর ছিল, যা এখন অনেকটাই থমকে গেছে চিনের কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বেড়াজালে। ভাবতেই অবাক লাগে, কিভাবে রাতারাতি অনেক কিছু পাল্টে যেতে পারে!
অন্যদিকে, তাইওয়ান কিন্তু এখনো তার গণতান্ত্রিক চেতনা আর স্বায়ত্তশাসনের মশাল জ্বালিয়ে রেখেছে, যা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়। তারা বারবার দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিচ্ছে, হংকং-এর মতো ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেল তাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এই অটল অবস্থান একদিকে যেমন সাহস জোগায়, তেমনই অন্যদিকে চিনের ক্রমবর্ধমান চাপ আর সামরিক মহড়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এই সবকিছু যেন এক গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে যেমন তার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর, তেমনই বেজিং তাদের ‘এক চিন নীতি’ থেকে একচুলও নড়তে নারাজ। আন্তর্জাতিক মহলেও এই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, নানা হিসাব-নিকাশ। সত্যি বলতে, এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে আমরা সবাই খুব চিন্তিত। এই সব জটিল সমীকরণ নিয়েই আমাদের আজকের লেখা। চলুন, এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের আদ্যোপান্ত বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
যখন ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ প্রশ্নের মুখে

এই নীতিটা আসলে চীনের একটি প্রতিশ্রুতি ছিল – হংকং, ম্যাকাও এবং ভবিষ্যতে তাইওয়ানের জন্য। ১৯৯৭ সালে যখন হংকং ব্রিটেনের কাছ থেকে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হলো, তখন বলা হয়েছিল যে হংকং-এর পুঁজিবাদী অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা এবং নাগরিক স্বাধীনতা ৫০ বছরের জন্য অক্ষত থাকবে, যদিও এটি চীনের অংশ হবে। শুনতে দারুণ মনে হলেও, বাস্তবে এর প্রয়োগ কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে আমার মনে সবসময়ই একটা প্রশ্ন জাগে। অনেক সময় মনে হয়, এই ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ আসলে একটি দোদুল্যমান তলোয়ারের মতো, যা কখন কার ঘাড়ে পড়বে বলা কঠিন। বিশেষ করে হংকং-এর সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখলে এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়। আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তবে চীনের দিক থেকে বারবার বলা হয়েছে যে এই নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না এবং এটি হংকং-এর দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা যারা বাইরে থেকে দেখছি, তাদের কাছে মনে হয়, বাস্তবে স্বাধীনতার পরিধিটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।
তত্ত্ব আর বাস্তবের ফারাক
‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি কাগজে-কলমে যতটা উদার, বাস্তব প্রয়োগে ততটা নয়, অন্তত আমার তেমনই মনে হয়। হংকং-কে দেওয়া হয়েছিল উচ্চ মাত্রার স্বায়ত্তশাসন, যা মূল ভূখণ্ডের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাসের পর, সেই স্বায়ত্তশাসনের অনেক কিছুই যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা, এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে সংকুচিত করার মতো ঘটনাগুলো আমাদের হতাশ করে তোলে। আমার তো মনে হয়, হংকং-এর সাধারণ মানুষ হয়তো একটা ভিন্ন স্বপ্নের জাল বুনেছিল, কিন্তু তা হয়তো তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাইওয়ানও এই পুরো বিষয়টাকে খুব কাছ থেকে দেখছে এবং তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে হংকং-এর মডেল তাদের জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাইওয়ানের নেতারা দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে তাদের গণতান্ত্রিক জীবনধারা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
চীনের কঠোর নীতি এবং তার প্রভাব
চীনের কঠোর নীতি হংকং-এর উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ২০১৯ সালের বড় আকারের বিক্ষোভের পর ২০২০ সালে যে জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা হয়, তা হংকং-এর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক নতুন মোড় এনেছে। এই আইনের ফলে বিচ্ছিন্নতা, নাশকতা, সন্ত্রাসবাদ এবং বিদেশি শক্তির সাথে আঁতাত করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। সত্যি বলতে, আমি যখন এই খবরগুলো পড়ি, তখন মনে হয়, স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা মানুষের কণ্ঠস্বর কিভাবে এভাবে রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে!
এই আইনের প্রভাবে অনেক গণতন্ত্রপন্থী নেতাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অনেকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। হংকং-এর আইন পরিষদ এখন বেইজিংপন্থীদের দখলে, যা সেখানকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরাও কিছুটা দ্বিধায় আছেন, যা হংকং-এর অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।
হংকং-এর স্বাধীনতা কি সত্যিই অতীতের অংশ?
কয়েক বছর আগেও হংকং-এর রাস্তায় যে স্বাধীনতার আওয়াজ শোনা যেত, এখন তা অনেকটাই স্তিমিত। আমার মনে পড়ে, শিক্ষার্থীরা যেভাবে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য লড়ছিল, তা ছিল এক দারুণ অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা আইন সেই সমস্ত আওয়াজকে প্রায় চুপ করিয়ে দিয়েছে। এখন মনে হয়, হংকং যেন এক নতুন সময়ের মুখোমুখি, যেখানে বেইজিং-এর প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অনেকে তো মনে করেন, হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের দিন শেষ। এটি চীনের ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির অধীনে থাকলেও, এর স্বতন্ত্র চরিত্র অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। এর ফলে হংকং-এর আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আগে হংকং এশিয়ার অন্যতম মুক্ত অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল, কিন্তু এখন সেই চিত্র অনেকটাই ভিন্ন।
জাতীয় নিরাপত্তা আইনের কালো ছায়া
হংকং-এর উপর জাতীয় নিরাপত্তা আইনের কালো ছায়া সত্যিই গভীর। ২০২০ সালে এই আইন পাসের পর থেকে সেখানে নাগরিকদের অধিকার এবং স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং সমাবেশের স্বাধীনতা – এই সবই এখন নিয়ন্ত্রিত। আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব খারাপ লাগে যখন দেখি, কিভাবে গণতন্ত্রপন্থী গণমাধ্যমগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেকেই গ্রেপ্তার বা আটকের ভয়ে হংকং ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, বিশেষ করে তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে। এটি শুধু হংকং-এর রাজনৈতিক পরিবেশকেই নয়, এর সামাজিক কাঠামোকেও প্রভাবিত করছে। তরুণ প্রজন্ম যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল, তারা এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে।
পরিবর্তিত দৈনন্দিন জীবন ও কণ্ঠরোধের চিত্র
জাতীয় নিরাপত্তা আইনের কারণে হংকং-এর সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষ খোলাখুলিভাবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে ভয় পায়, কারণ কখন কার কথাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে। আমি যখন ভাবি, একসময় যে শহরে মুক্তভাবে প্রতিবাদ করা যেত, সেখানে এখন ছোট একটা প্রতিবাদও কঠোর হাতে দমন করা হয়, তখন খুব কষ্ট হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বা জনসমক্ষে নিজেদের মতামত প্রকাশ করার আগে মানুষ অনেকবার ভাবে। এমনকি স্কুলে পাঠ্যক্রমও পরিবর্তিত হচ্ছে, যেখানে চীনের মূল ভূখণ্ডের প্রতি আনুগত্য বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের পরিবেশ আসলে সমাজের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
তাইওয়ানের অবিচল যাত্রা: গণতন্ত্রের মশাল হাতে
হংকং যখন তার স্বাধীনতা হারাচ্ছে, তাইওয়ান তখন তার গণতন্ত্রের মশাল হাতে নিয়ে অটল দাঁড়িয়ে আছে। তাইওয়ানের মানুষ নিজেদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং স্বায়ত্তশাসনের প্রতি অবিচল। যখনই চীন ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেলের কথা তোলে, তাইওয়ান দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে। তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বারবার বলছেন যে তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ একমাত্র তাইওয়ানের জনগণই নির্ধারণ করবে। এই দৃঢ়তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাইওয়ান শুধু নিজেদের অস্তিত্বের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চীনের সামরিক চাপ এবং আগ্রাসন সত্ত্বেও তাইওয়ান কখনোই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের বিশ্বাস
তাইওয়ানের মানুষের কাছে গণতন্ত্র শুধু একটি শাসন ব্যবস্থা নয়, এটি তাদের জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা নিজেদের ভোটাধিকার এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকারকে ঈশ্বরের দান হিসেবে দেখে, যা তাদের আত্মপরিচয়ের মূলে নিহিত। আমার মনে হয়, এই দৃঢ় বিশ্বাসই তাদের এত চাপ সত্ত্বেও অটল থাকতে সাহায্য করে। তাদের সংবিধানে সার্বভৌমত্ব এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের যে কথা বলা আছে, তা রক্ষায় তারা বদ্ধপরিকর। তাইওয়ানের জনগণ মনে করে, তাদের মূল্যবোধগুলো চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই বিশ্বাসই তাদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছে এবং চীনের যে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছে।
চীনের চাপ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন
তাইওয়ানের উপর চীনের সামরিক চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে প্রায়ই যুদ্ধবিমান পাঠায় এবং সামরিক মহড়া চালায়, যা তাইওয়ানকে ভীত করার একটি প্রচেষ্টা। সম্প্রতি, তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের পরপরই চীন আরও বড় আকারের সামরিক মহড়া চালিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে তাইওয়ান শুধু একা নয়, আন্তর্জাতিক মহলের একটি বড় অংশ তাদের গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রধান আন্তর্জাতিক সমর্থক এবং তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। আমার তো মনে হয়, এই আন্তর্জাতিক সমর্থন তাইওয়ানকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং চীনের আগ্রাসন মোকাবেলায় তাদের সাহস জুগিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলছে যে তারা তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করে না, কিন্তু তাদের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন করে।
বিশ্ব মঞ্চে এই দুই অঞ্চলের অবস্থান
হংকং এবং তাইওয়ান, দুটি অঞ্চলই বিশ্ব রাজনীতিতে এক বিশেষ অবস্থানে রয়েছে। এদের ভবিষ্যত নিয়ে শুধু এই অঞ্চলগুলোর মানুষই নয়, পুরো বিশ্বই চিন্তিত। যখন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বা আলোচনায় এই দুটি অঞ্চলের কথা আসে, তখন ভূ-রাজনৈতিক কৌশল এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ এক জটিল সমীকরণে মিশে যায়। আমার মনে হয়, তাইওয়ানের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন যেমন বাড়ছে, তেমনি হংকং-এর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। এই দুটি অঞ্চলের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি রাজনৈতিক ঘোষণা বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়, কারণ এর প্রভাব শুধু এশিয়াতে নয়, পুরো বিশ্ব অর্থনীতি এবং নিরাপত্তায় পড়ে।
ভূ-রাজনৈতিক কৌশল এবং বৃহৎ শক্তির খেলা
হংকং এবং তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে এক ভূ-রাজনৈতিক খেলা চলছে। একদিকে চীন এই দুটি অঞ্চলকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই অঞ্চলের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কথা বলছে। তাইওয়ান প্রণালী এখন বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে সামরিক মহড়া এবং কূটনৈতিক চাপ প্রতিনিয়ত বিদ্যমান। এই টানাপোড়েন শুধু চীন-মার্কিন সম্পর্ককেই নয়, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের নীতিকেও প্রভাবিত করছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, ছোট ছোট অঞ্চলের উপর যখন বৃহৎ শক্তির খেলা শুরু হয়, তখন সাধারণ মানুষের জীবন কতটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও নীরবতা
হংকং-এর পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, অনেক দেশই চীনের অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে সরাসরি কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণতন্ত্র খর্ব হওয়ার ঘটনাগুলো নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো নিন্দা জানালেও, বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের নীরবতা দেখা যায়। অন্যদিকে, তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন কিছুটা জোরালো হলেও, বেশিরভাগ দেশই চীনের ‘এক চিন নীতি’ মেনে চলে, যার অর্থ তারা তাইওয়ানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। এটি এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে, যেখানে নৈতিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আমার মনে হয়, এই নীরবতা অনেক সময় আগ্রাসী শক্তিকে আরও উৎসাহিত করে।
অর্থনৈতিক টানাপোড়েন আর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

হংকং এবং তাইওয়ান উভয়ই অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। হংকং একসময় এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র ছিল, আর তাইওয়ান আধুনিক প্রযুক্তির, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। এই দুটি অঞ্চলের অর্থনীতি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম, কারণ তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় একটি কৌশলগত অবস্থান তৈরি করে। আমার মনে হয়, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা শুধু সেখানকার মানুষের জন্যই নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত জরুরি।
বাণিজ্য যুদ্ধ এবং প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই চলছে, তাতে হংকং ও তাইওয়ান যেন দাবার ঘুঁটির মতো। তাইওয়ান বিশ্বের বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী দেশ, যা আধুনিক প্রযুক্তির প্রাণ। চীনের উদ্দেশ্য হলো তাইওয়ানের এই প্রযুক্তিগত আধিপত্যকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তাইওয়ানকে সুরক্ষা দিয়ে চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কিছুটা হলেও আটকে রাখতে। আমার মনে হয়, এই লড়াই শুধু সামরিক নয়, এটি অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াইও বটে। এই বিষয়ে একটি ছোট তুলনামূলক চিত্র দেওয়া যাক:
| বৈশিষ্ট্য | হংকং | তাইওয়ান |
|---|---|---|
| রাজনৈতিক অবস্থা | চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল, ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির অধীনে | স্বশাসিত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, চীন নিজেদের অংশ দাবি করে |
| গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা | জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রভাবে খর্ব হয়েছে | পূর্ণ গণতন্ত্র বিদ্যমান, মুক্ত গণমাধ্যম ও নির্বাচন |
| অর্থনৈতিক গুরুত্ব | আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্র (পূর্বে), এখন কিছুটা দুর্বল | বিশ্বের বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী, উচ্চ প্রযুক্তির কেন্দ্র |
| চীনের নীতি | ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ কঠোরভাবে প্রয়োগ, পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ | ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ প্রস্তাব, বলপ্রয়োগের হুমকি |
| আন্তর্জাতিক সমর্থন | মানবাধিকার উদ্বেগে সীমিত সমর্থন | গণতন্ত্র ও আত্মরক্ষায় জোরালো সমর্থন (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র থেকে) |
তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল
তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমি নিজ চোখে দেখেছি। ছোট একটি দ্বীপ হলেও, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় চিপ তৈরি করে, যা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি অচল। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে গাড়ি, কম্পিউটার এমনকি সামরিক সরঞ্জাম পর্যন্ত সবকিছুর জন্য এই চিপ অপরিহার্য। তাইওয়ানের উপর কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বা অর্থনৈতিক অবরোধ বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে, যা পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে। আমার মনে হয়, তাইওয়ানের এই প্রযুক্তিগত আধিপত্যই তাদের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা কবচ।
মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
এই ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। হংকং এবং তাইওয়ানের মানুষের মনে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে – একদিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়। আমি যখন তাদের কথা ভাবি, তখন মনে হয়, তাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তই এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। তারা চায় নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং পরিচিতি বজায় রাখতে, যা তাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
সাধারণ মানুষের মনস্তত্ত্ব
হংকং-এর মানুষের মনে এখন এক ধরনের হতাশা কাজ করে। একসময় যে স্বাধীনতা এবং সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করত, তা এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এবং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছে। আমার কাছে মনে হয়, এই মানসিক চাপ তাদের দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। অন্যদিকে, তাইওয়ানের মানুষের মধ্যে এক ধরনের দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাসের মনোভাব দেখা যায়। তারা জানে যে তাদের গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে তাদের একজোট থাকতে হবে। তারা গর্বিত তাদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের জন্য এবং চীনের ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেলকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।
তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন এবং হতাশা
হংকং-এর তরুণ প্রজন্ম, যারা একসময় গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় নেমেছিল, তারা এখন হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের স্বপ্নগুলো যেন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বেড়াজালে আটকা পড়েছে। অনেকে ভালো ভবিষ্যৎ এবং মুক্ত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আমি যখন তাদের এই সংগ্রাম দেখি, তখন আমার মনে হয়, এই তরুণদের আশা হারিয়ে যাওয়াটা সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তাইওয়ানের তরুণ প্রজন্ম অবশ্য ভিন্ন পথে হাঁটছে। তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তারা আধুনিক প্রযুক্তিতে যেমন পারদর্শী, তেমনি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন। তাদের মধ্যে দেশের প্রতি এক দৃঢ় আনুগত্য দেখা যায়, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: এক অনিশ্চিত পথের যাত্রী
এই পুরো পরিস্থিতিটা যখন আমি দেখি, তখন আমার মনে হয়, এক অনিশ্চিত পথের যাত্রী যেন আমরা সবাই। একজন ব্লগ ইনোফ্লুয়েন্সার হিসেবে, আমি বহু মানুষের সাথে কথা বলি, তাদের মতামত শুনি। আমার যখন হংকং বা তাইওয়ান নিয়ে আলোচনা হয়, তখন তাদের চোখে আমি এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি দেখতে পাই – আশা, ভয়, দৃঢ়তা এবং একরাশ প্রশ্ন। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই অঞ্চলগুলো শুধু মানচিত্রের কিছু বিন্দু নয়, এরা লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। এই পরিস্থিতির দিকে আমাদের সবসময় নজর রাখতে হবে।
ভ্রমণ এবং মানুষের সাথে আলাপচারিতা
আমি যখন বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে মিশি বা ভ্রমণের সুযোগ পাই, তখন হংকং ও তাইওয়ানের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কৌতূহল আমাকে মুগ্ধ করে। আমি যখন তাদের সাথে হংকং-এর গণতন্ত্রপন্থীদের সংগ্রামের কথা বলি, বা তাইওয়ানের মানুষের অদম্য স্পৃহার কথা শেয়ার করি, তখন তাদের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। আমার মনে আছে, একবার এক বন্ধুর সাথে তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হচ্ছিল, তখন সে বলছিল, “আমরা হয়তো দূর থেকে দেখছি, কিন্তু তাদের প্রতিটি দিনই এক নতুন পরীক্ষার মতো।” এই ধরনের আলাপচারিতা আমাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে। মানুষ কতটা গভীরভাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে, তা দেখলে সত্যি মন ভরে যায়।
আমরা কী শিখতে পারি?
হংকং এবং তাইওয়ানের এই টানাপোড়েন থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। প্রথমত, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার মূল্য কতটা অপরিসীম, তা এই অঞ্চলের মানুষের সংগ্রাম থেকে বোঝা যায়। দ্বিতীয়ত, বৃহৎ শক্তির কৌশলগত খেলা কিভাবে ছোট অঞ্চলের মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে, তাও আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। আমার মনে হয়, প্রতিটি দেশের উচিত নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় সজাগ থাকা। একই সাথে, আন্তর্জাতিক মহলেরও উচিত এই ধরনের পরিস্থিতিতে ন্যায় ও মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো, কারণ নীরবতা অনেক সময় অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়। এই পুরো যাত্রাটা আমাদের শিখিয়ে দেয়, স্বাধীনতা সহজলভ্য নয়, আর তা ধরে রাখতে হলে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়।
글을마치며
আমার মনে হয়, হংকং এবং তাইওয়ানের এই যে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি, তা কেবল দুটি অঞ্চলের নিজস্ব গল্প নয়, বরং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের এক বৃহত্তর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। এই পুরো আলোচনাটা করতে গিয়ে আমার মনটা বারবার যেন একটু ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে, কারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আর তাদের নিজস্ব পরিচয়ের জন্য লড়াইটা কতটা কঠিন হতে পারে, তা এই দুই অঞ্চলের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আমরা যারা ব্লগ লিখি বা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানুষকে জানাতে চাই, তাদের উচিত এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আরও বেশি সচেতন হওয়া এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কারণ, ইতিহাস সাক্ষী, নীরবতা অনেক সময়ই বড় ক্ষতির কারণ হয়। আমি সত্যিই আশা করি, একদিন এই দুই অঞ্চলের মানুষেরাও তাদের স্বপ্ন পূরণের এক মুক্ত আকাশ দেখতে পাবে, যেখানে কোনো চাপ বা হুমকির ভয় থাকবে না। এই আলোচনা থেকে আমরা সবাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পেরেছি বলেই আমার বিশ্বাস। এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে এবং আমরা যারা এই লেখাগুলো পড়ছি, তাদেরও উচিত এর গুরুত্ব অনুধাবন করা।
알া두লে 쓸মো আছে তথ্য
1. ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির সীমাবদ্ধতা: হংকং-এর অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে এই নীতি কাগজে-কলমে যতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বাস্তবে তার প্রয়োগে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্বাধীনতার পরিধি ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে পারে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
2. তাইওয়ানের গণতন্ত্রের দৃঢ়তা: চীনের ক্রমাগত চাপ সত্ত্বেও তাইওয়ান তার গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। এটি বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ যে কিভাবে ছোট একটি অঞ্চল বৃহৎ শক্তির সামনে নিজেদের পরিচয় ধরে রাখতে পারে। তাদের এই অটল অবস্থান বিশ্বের অনেক গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা।
3. ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব: হংকং এবং তাইওয়ানের পরিস্থিতি শুধু স্থানীয় বিষয় নয়, এটি বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ, বিশেষ করে চীন-মার্কিন সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
4. অর্থনৈতিক গুরুত্ব: তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। এর উপর কোনো ধরনের আঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে প্রতিটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্ষেত্রকে স্থবির করে দিতে পারে।
5. জনগণের আকাঙ্ক্ষা: উভয় অঞ্চলের জনগণই নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং জীবনধারাকে টিকিয়ে রাখতে চায়। তাদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়, যা আমাদেরকে মানবাধিকারের গুরুত্ব বোঝায় এবং সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে
বন্ধুরা, আজকের আলোচনা থেকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারলাম। প্রথমত, হংকং-এর ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেলটি চীনের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের কারণে তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে এসেছে, যার ফলে হংকং-এর স্বায়ত্তশাসন এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব হয়েছে। সেখানকার মানুষেরা এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন, তাদের মৌলিক অধিকার এবং মুক্তভাবে বাঁচার স্বপ্ন যেন সংকটের মুখে। অন্যদিকে, তাইওয়ান তাদের গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে চলেছে, চীনের সামরিক চাপ এবং আগ্রাসন সত্ত্বেও তারা নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়ছে না, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য এবং সারা বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। এই দুটি অঞ্চলের ভবিষ্যৎ শুধু তাদের নিজেদের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং বিশ্ব ভূ-রাজনীতি এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর কৌশলের উপরও অনেকটা নির্ভর করে। বিশেষ করে তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের গুরুত্ব বিশ্ব অর্থনীতিকে এই অঞ্চলের প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের স্বাধীনতা এবং আত্মপরিচয়ের জন্য সংগ্রাম প্রতিটি সমাজের জন্য একটি চিরন্তন শিক্ষা, যা আমাদের সবাইকে আরও বেশি সচেতন করে তোলে। আমরা আশা করি, এই অঞ্চলগুলোতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: হংকং-এর ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেল কেন এখন ভিন্ন মনে হচ্ছে এবং এর পেছনে মূল কারণ কী?
উ: এখানে আমি আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, কয়েক বছর আগেও হংকং-এর যে স্বাধীনচেতা মনোভাব ছিল, তা এখন সত্যিই বিরল মনে হয়। আপনারা হয়তো দেখেছেন, চিনের জাতীয় নিরাপত্তা আইন (National Security Law) কীভাবে রাতারাতি পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। এই আইন আসার পর থেকে হংকং-এর নিজস্ব বিচারব্যবস্থা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো অনেকটাই সংকুচিত হয়েছে বলে আমার মনে হয়। আগে হংকং-এর মানুষ তাদের নিজস্ব পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করতেন, কিন্তু এখন বেজিং-এর প্রভাব এতটাই বেড়েছে যে, সেই গর্ব অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে। আমি নিজে দেখেছি, অনেক প্রগতিশীল মানুষও এখন নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পান। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, এটি হংকং-এর আত্মপরিচয় এবং তার মানুষের জীবনযাত্রার উপর একটি গভীর আঘাত। একসময় বিশ্বের আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে হংকং-এর যে ঝলক ছিল, সেটাও যেন একটু ম্লান হয়ে গেছে এই নতুন নিয়মের বেড়াজালে।
প্র: তাইওয়ান কেন হংকং-এর ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেল গ্রহণ করতে রাজি নয় এবং তারা কী ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে?
উ: তাইওয়ানের মনোভাব দেখে আমি সত্যি মুগ্ধ। তারা বারবার দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, হংকং-এর অভিজ্ঞতা তাদের জন্য এক সতর্কবার্তা। আমার মনে হয়, তারা হংকং-এর বর্তমান পরিস্থিতি দেখে নিজেদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং স্বায়ত্তশাসনের প্রতি আরও বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। তাইওয়ানের মানুষ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপোষ করতে নারাজ। তারা মনে করে, ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ আসলে তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার একটি কৌশল মাত্র। আর ঝুঁকি?
উফফ! আপনারা তো দেখতেই পাচ্ছেন, চিন প্রতিনিয়ত সামরিক মহড়া চালাচ্ছে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে যেমন তাঁর দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর, তেমনই চিনের চাপ দিন দিন বাড়ছে। এই পুরো পরিস্থিতিটা যেন বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তাইওয়ানের মানুষকে তাদের গণতন্ত্র আর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে, যা সত্যি হৃদয়বিদারক।
প্র: হংকং ও তাইওয়ানের এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে কেমন প্রভাব ফেলছে এবং এর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উ: সত্যি বলতে, হংকং এবং তাইওয়ানের এই টানাপোড়েন আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হল, বিশ্বের অনেক দেশই চিনের এই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চিন্তিত। একদিকে যেমন মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের প্রশ্ন উঠছে, তেমনই অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হচ্ছে। আমি মনে করি, এই অঞ্চল শুধু এই দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনীতির ওপরও পড়ছে। পশ্চিমের দেশগুলো তাইওয়ানের গণতন্ত্রকে সমর্থন করলেও, চিনের অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তির কারণে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে ইতস্তত বোধ করছে। তাইওয়ান যদি চিনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই বদলে যাবে, যা বিশ্বশান্তির জন্য একটি বড় হুমকি হতে পারে। এর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলা সত্যিই কঠিন। আমার মনে হয়, তাইওয়ানের মানুষের দৃঢ়তা এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন—এই দুটিই এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে এর পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে আমিও আপনাদের মতোই চিন্তিত।






